Tag Archives: কংগ্রেস সরকারের

রেল বাজেট – রেল বিক্রির ষড়যন্ত্রের দলিল।

বিগত বহু বছর ধরে এবারের বাজেটে ও রেল বাজেটে সেই একই প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই। প্রথমত রেলের ভাড়া বাড়িয়ে প্রথমে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত বলে হাত পা ঝাড়ার পর রেল বাজেটে জন স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে শুধু মাত্র বাজারি স্বার্থের গুন গান গেয়ে বিজেপি প্রমান করলো আরও একবার যে আসলে কোন শ্রেনীর কাছে ওদের টিকি বাঁধা।

 

রেল বাজেটে নিত্য যাত্রীদের অসুবিধার কথা, তাদের দাবির কথা নেই, কোন প্রকল্প নেই দিল্লী – উত্তর প্রদেশ – বিহার বা মধ্য প্রদেশের মতন রাজ্যের নিত্য অফিস – কলকারখানায় যাওয়া যাত্রীদের জন্যে কোন ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস নাই, ইএমইউ এর সংখ্যা কম, এহেন রাজ্যগুলিতে প্রতিদিন নিত্য যাত্রীরা দুরপাল্লার ট্রেনে স্লিপার কামরায় বাধ্য হয়ে যাতায়াত করেন এবং ঘুষখোর  টিটিই দলের সঙ্গে ইনাদের প্রতিদিনকার দ্বন্ধ। আমাদের দেশে রেল বাজেট চিরকালই প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছোটালেও জনগণের সাধারণ দাবিগুলি পূরণ করতে অপারগ। অথচ ধনিক শ্রেনীর প্রতিনিধিদের জন্যে বিশেষত মুম্বাই ও আহমেদাবাদ শহরে বাস করা মুত্সুদ্দি বুর্জোয়াদের জন্যে ঘোষিত হল বুলেট ট্রেন। কারণ এই মুত্সুদ্দি বুর্জোয়ারা পয়সা ও সক্রিয় সমর্থন দিয়ে তুলে এনেছে তাদের প্রতিনিধি মোদীকে দিল্লীর মসনদে। তাই এই বুলেট ট্রেন করার জন্যে (বুলেট ট্রেন সাধারণ ট্র্যাক এ চলতে পারে না তাই নিশ্চয় আলাদা ডেডিকেটেড ট্র্যাক বসানো হবে) কোটি কোটি টাকা খরচা করা এই মোদী সরকারের কাছে সমস্যার নয়, সমস্যা হল সাধারণ যাত্রীদের কামরা মেরামতির দিকে নজর দেওয়া ও পরিশ্রুত পানীয় জলের বন্দোবস্ত করা, বাথরুম পরিষ্কার রাখা ও তাতে জলের সুষ্ঠ বন্দোবস্ত রাখা, এবং সর্বপরি যাত্রী সুরক্ষা ও পরিষেবার কথা তো এই বাজেটে সর্বদার মতনই তথৈবচ।

 

যেখানে ২১ শতাব্দীতেও ভারতবর্ষের মত বিশ্বের সর্ববৃহত রেল নেটওয়ার্ক যে দেশে সেই দেশে অটোমেটেড ওয়ার্নিং সিস্টেম নাই, যার ফলে ট্রেনের ড্রাইভার কে ওয়্যারলেস মেসেজ এর উপর নির্ভর করে গাড়ি চালাতে হয়, যার ফলে যে কোন বিরাট দুর্যোগ ঘটতে পারে, এলার্ট অ্যালার্ম এর জায়গায় ট্রেনের ড্রাইভার কে আজও হাতল ধরে পুরো যাত্রাকালে বসে থাকতে হয়।  অটোমেটেড ওয়ার্নিং সিস্টেম না থাকায় প্রতিবছর শীতকালে ব্যাপক যানজটের জন্যে লক্ষ লক্ষ জনগণ কে উত্তর ভারতে বিশেষত দুর্ভোগে পড়তে হয়।

ট্রেনের সংরক্ষণ ব্যবস্থায় ব্যাপক কারচুপির ফলে ব্যাপক যাত্রীদের যেমন সমস্যায় পড়তে হয় অন্যদিকে অসংরক্ষিত কামরায় দুরপাল্লার যাত্রা সামান্য পরিকাঠামোর অভাবে দুর্বিষহ হয়ে যায়।

 

এ ছাড়া রেলের বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ৬ লক্ষ শূন্যপদ না ভরার প্রতিশ্রুতি প্রায় সকল রঙের সরকারই নিয়ে রেখেছে, ফলে সাধারণ রেল কর্মী ও শ্রমিকদের উপর কাজের চাপ বেড়েছে প্রচুর এবং বেতন বাড়ানোর বায়নায় আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ রেলের শ্রমিক – কর্মচারীদের উপর বাড়িয়েছে শোষনের বোঝা।

 

সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাস বিজেপি সরকার পুরাতন কংগ্রেস সরকারের পথে চলে রেলে FDI বা প্রতক্ষ্য বিদেশী বিনিয়োগের রাস্তা উদার করে খুলে দিয়েছে। যা অপারেশন্স ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রেই সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজিকে শোষণ ও লুণ্ঠনের খোলা দরজা দিয়েছে।  এর মধ্যে দিয়েই রেলের বেসরকারিকরণ এর প্রক্রিয়া আরও তীব্র গতিতে ছুটবে এবং রেলের শ্রমিক কর্মচারী ও ব্যাপক রেল যাত্রী জনগণের উপর বাড়বে শোষনের বোঝা।

 

এর আগেই কংগ্রেস সরকারের আমলে ফ্রেইট ট্রেনের ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে পিপিপি বা পাবলিক – প্রাইভেট পার্টনারশীপ এর নামে পিছনের দরজা দিয়ে বেসরকারিকরণ এর রোলার চালানো শুরু হয় এবং এই শাসক শ্রেনীর পরিকল্পনা কে বাস্তবায়িত করতে বিজেপি সরকার যত তারাতাড়ি সম্ভব রেলের ব্যাপক বেসরকারিকরণের পথে এগিয়ে যাবে।

 

এ ছাড়াও খাদ্য সরবাহ ও ঠিকাদার প্রক্রিয়ায় লোক নিযুক্তির মাধ্যমে সর্বস্তরে বেসরকারিকরণ লাগামহীন শোষণের পথ প্রশস্ত করছে রেলের শ্রমিক – কর্মচারী ও জনগণের উপর।

 

আজ মার্কসবাদী – লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কর্তব্য হল ব্যাপক রেল শ্রমিক – কর্মচারীর মধ্যে বিপ্লবী রাজনীতি প্রচারের মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ – সাম্রাজ্যবাদ এর বিরুদ্ধে এবং ব্যাপক রেল যাত্রী – নিত্য যাত্রী শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষের সাথে ঐক্যবদ্ধ ভাবে গড়ে তুলতে হবে সংহতি মূলক আন্দোলন।

 

আজ সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে দেশের সব সম্পদ বেচে দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক দেশপ্রেমী – সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুক্ত মোর্চার খুবই দরকার। কিন্তু বিপ্লবী পার্টি – মার্কসবাদী – লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সংগ্রামে ভাঁটার টান চলায়, সংশোধনবাদ – সুবিধাবাদের শ্রমিক – কৃষক সংগ্রামগুলির উপর চরম দখলের কারনে এবং সর্বোপরি মার্কসবাদী -লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ও অন্যন্য বিপ্লবী শক্তির মধ্যে ঐক্য ও সংহতির অভাবে আজ ব্যাপক জনগণকে শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করে সাম্রাজ্যবাদের দালাল উপর সংগ্রামের মাধ্যমে আঘাত হানার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

 

চারু মজুমদারের শিক্ষা অবলম্বন করে আজ বিপ্লবী পার্টি – সিপিআই (এম-এল) ও অন্যান্য বিপ্লবী শক্তির মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা এক জরুরি কর্তব্য।

 

এই ঐক্যই রচনা করবে সাম্রাজ্যবাদ – সামন্তবাদ ও মুত্সুদ্দি পুঁজিবাদের ধ্বংস।